Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প
বিস্তারিত

সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প

 

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদার হাট শুধু ভাটিয়ারী মিলিটারি একাডেমী এর জন্য বিখ্যাত নয় এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম সমুদ্র। এ সমুদ্র হাত ছানী দিয়ে কাছে ডাকে। চাদনী রাতে সমুদ্রের জোয়ারের দৃশ্য দেখার মজাই আলেদা। সাগরেরে গর্জন আর পুরাতন জাহাজের আলো দুটি মিলে এক অপরুপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের বালিময় বেলাভুমি থেকে পুর্বদিকে তাকালে দেখা যায় চিরসবুজ ভাটিয়ারী পাহাড়।

 

শেষ বিকালে মায়াবী এক আবেশ তৈরি হয় প্রকৃতি ঘিরে। সূর্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিম আকাশে নামতে থাকে। লালচে তার আভা। গোল টিপের মতো। আকাশজুড়ে কোনো শিল্পীর নিপুন হাতের নানা রঙের তুলির ছোঁয়া। সারাদিনের রৌদ্রকরোজ্জ্বল পরিভ্রমণ শেষে বিসর্জনের আয়োজন চলে প্রকৃতিতে। সমুদ্রও নিজেকে ক্ষনিকের জন্য গুটিয়ে নেয়, হালকা ঢেউ তোলে, মৃদু শো শো গুঞ্জন করে।

সমুদ্রের বেলা ভুমিতে গড়ে উঠেছে সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। এ শিল্পের গোড়াপত্তনের পিছনে রয়েছে এক প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণীঝড়। এতদিন আমরা জানতাম ঝড় শুধুই স্বপ্ন ভাঙ্গে, তছনছ করে জনপদ। ঝড় মানে মহা প্রলয়, ঝড় জীবজগতের অবিরাম শত্রু। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সব কয়টি ঝড়ের স্বরূপ এমনই। কিন্তু ষাটের দশকে ঠিক এর উল্টো চরিত্র নিয়ে একটি ঝড় সীতাকুণ্ড উপকুলে আবির্ভূত হয়েছিল । সম্ভবত উপরিউক্ত কলঙ্কগুলো ঘুচাতে বদ্ধ পরিকর ছিল সে। তাই তো সীতাকুণ্ড তথা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল দূত হয়ে আসার সময় উপহার নিয়ে এসেছিল একটি গ্রীক জাহাজ “এমভি কুইন আল পাইন”। একসময় মঙ্গল দূত ঝড়টি চলে যায় কিন্তু উপজেলাবাসীর জন্য ফৌজদার হাটে রেখে যায় তার উপহার ২০ হাজার টন ওজনের জাহাজটি। 

এরপর অনেকদিন এই জাহাজটি সেই উপকূলে পড়েছিল অবহেলা অনাদরে। তখনো কেউ বুঝেনি যে এটি আসলেই একটি আলাদ্দিনের চেরাগ! এরপর জাহাজটির উপর নজর পড়ে স্থানীয় কিছু পুজিঁপতির। মজার ব্যাপার হল তারাও জাহাজটি ভাঙ্গার চেষ্টা করেনি, তারা জোর চেষ্টা চালিয়েছিল এমভি কুইন আলপাইনকে সচল করে সমুদ্রে ভাসানোর। 

দীর্ঘ চেষ্টা করেও সচল করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সচলের চেষ্টার টাকা তুলতেই জাহাজটি ভেঙ্গে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তারা। ডাকা হয় তৎকালীন চিটাগাং ষ্টিল মিলের ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামকে। তার তৎত্ত্বাবধানে শুরু হয় সীতাকুণ্ড তথা বাংলাদেশে প্রথম জাহাজ ভাঙ্গার কাজ। ভাঙ্গা হতে থাকল জাহাজ আর বিক্রি হতে থাকল এর মূল্যবান লোহা, ফার্নিচার, ক্রোকারিজ, ইঞ্জিন, জেনারেটর, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক রাডার, চিকিৎসা সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, অসংখ্য প্রকার ষ্টিল সরঞ্জাম সহ শত শত প্রকার দ্রব্য। সম্পূর্ণ জাহাজটি বিক্রির পর দেখা গেল অকল্পনীয় লাভ হয়েছে এই জাহাজ ভেঙ্গে। ফলে সংশ্লিষ্টদের অস্তিমজ্জায় মিশে গেল এক ভয়ংকর নেশা। একটাই চিন্তা জাহাজ আনা আর ভাঙ্গা। ক্রমাগত যোগাযোগ আর চেষ্টা এনে দিল রাস্তা। মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে একটি দুটি করে জাহাজ আনা হল। বাড়তে থাকল ব্যবসার পরিধি। জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত হল সীতাকুণ্ড। এক জাহাজ খুলে দিল অবারিত সম্ভাবনার দ্বার। জাহাজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকল, স্ক্রাপ ব্যবসা, লৌহ- ইস্পাত ব্যবসা, রি-রোলিং মিল, ফার্নিচার শপ, মেশিনারি শপ সহ অসংখ্য কর্মসংস্থান। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজের প্রয়োজনে এখানে এসে বাঁচার চেষ্টা করল হাজার হাজার অভাবী মানুষ। জায়গাজমি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকল কেউ কেউ। স্থানীয় জায়গা সম্পত্তির দাম বাড়ল ৫০ গুন পর্যন্ত। অনেক দরিদ্র হল ধনী। সেই সাথে দিন দিন বিস্তার লাভ করল জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প।। উপজেলার বার আউলিয়া থেকে ফৌজদার হাটের ৭কি.মি. এলাকায় শিপ ইয়ার্ডের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এক-একটি ইয়ার্ডকে ঘিরে গড়ে উঠল বহুমুখী ব্যবসা। দেশ পেল একটি ভাসমান লৌহখনি। বদলে গেল উপকুলীয় জীবন যাত্রার মান।

 

সারা বছর জুড়েই অসংখ্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় এই স্থানটি মুখরিত থাকে। এখানে পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য বিশাল একটি মাঠ রয়েছে। এটি একটি ভাল পিকনিক স্পট, সাধারণত নভেম্বর থেকে মে পর্জন্ত এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক পিকনিক অথবা ঘুরতে এখানে আসে

 

কিভাবে যাবেনঃ

 

 

 

সড়ক পথেঃ

 

ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে। আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। সবগুলো বাসই ফৌজদার হাট থামে।

 

চট্টগ্রাম থেকেঃ চট্টগ্রাম থেকে ফৌজদার হাট আসতে হলে শহরের যে কোন স্থান থেকে সিএনজি করে ভ্রমণ করতে হবে। তা ছাড়াও অলঙ্কার থেকে কিছু ছোট গাড়ী ছাড়ে (স্থানীয় ভাবে মেক্সী নামে পরিচিত) সেগুলো করেও আসা যাবে।

 

 রেলপথেঃ
ঢাকা থেকেঃ ঢাকা থেকে ছেড়েঁ আসা দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল”-ই শুধু সীতাকুণ্ডে থামে, এটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে ৭টায়। অন্যান্য আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।

আকাশ পথঃ
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স সহ বিভিন্ন কোম্পানীর ফ্লাইট আছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে বিমানে ৫০ মিনিট সময় নেয়।