সীতাকুন্ড উপজেলার পটভূমিঃ চট্টগ্রাম জেলার একটি অন্যতম উপজেলাসীতাকুন্ড।মোট ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে উপজেলাটি গঠিত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উদার এবং মুক্ত প্রকৃতির ছন্দময় মুর্চ্ছনায় ,দিগন্ত বিস্তারী গগনের সরল সৌহার্দ্যে গরিয়ান বীর চট্টলার উপকন্ঠ সীতাকুন্ড । ইতিহাসের মহিমায় প্রোজ্জ্বল তার শত যোজনার সাগর গিরি নদীর আবেষ্টন। এখানকার মাটি আর মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন ধারা মন ও প্রাণকে উদ্বেলিত করে। প্রায় ৩৫ কি.মি.বিস্তৃত সাগর সৈকতের প্রান্ত ছুঁয়ে আছে ঘন উপকুলীয় বন। সমুদ্র অবগাহনে মেতে উঠে নির্সগ । পূর্বে শ্যামলীমাময় বিচ্ছিন্ন সু-উচ্চ গিরিশৃঙ্ঘ পরিদৃশ্যমান ও বনসম্পদে সুশোভন ,বিস্তৃত আবাসভুমি আর ফসলের অবারিত মাঠ।
চট্টগ্রাম নগরীর ৯ কি.মি. উত্তরে রাজধানী ঢাকা থেকে ২১৯ কি.মি.দক্ষিণে - ৩৫ কি.মি. দৈর্ঘ বিশিষ্ট গিরিসৈকতের মিলন কেন্দ্র বার আউলিয়ার পূণ্যভূমিতে সীতাকুন্ড থানার অবস্থান।
নামকরনঃ- সীতাকুন্ডের নামকরন সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে। ইতিহাসের দৃষ্টিকোন থেকে নামকরনের সত্যতা সম্পর্কে জোরালোভাবে কিছু বলা যাবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে মনে করেন রামায়ন বর্ণিত সীতা এখানে আগমন করেন এবং একটি কুন্ডে স্নান করেন ।সেই হতে সীতাকুন্ডে নামের উৎপত্তি।কারো কারো মতো রাম স্বয়ং তার পত্নীর নামেই সীতাকুন্ড নাম করন করেন। আবার কেহ কেহ মনে করেন দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞের সময় ক্ষিপ্ত উম্মত্ত শিব তার পত্নী সতীর শবদেহ খন্ড বিখন্ড করেন এবং তার নামানুসারে সীতাকুন্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুন্ড হয় ।অর্থ্যাৎ হিন্দু ধর্মের পুরাণিক উপাখ্যানে নারদ মুনির ভূমিকা সর্বজন বিদিত। নারদ মুনির ভূমিকা থেকে স্পষ্ট হয় যে দক্ষরাজার কন্যা পার্বতী মা বাবার অগোচরে ভালবেসে বিয়ে করেন শিবকে এতে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে এিভূবনের সবাইকে আমন্ত্রন জানালেন।সেখানে শিবকে অপদস্ত করার জন্য তার মূর্তি বানিয়ে রাজপ্রাসাদের তোরনের বাহিরে প্রহরী হিসাবে রাখা হল।নারদ মুনি থেকে পার্বতী একথা জানতে পেরে নিজেই প্রত্যক্ষ করলেন এবং লজ্জায় অপমান দেহত্যাগ করলেন। পার্বতী বেচে নেই জেনে উম্মত্তপ্রায় শিব পার্বতীর মৃতদেহ মাথায় নিয়ে প্রলয় নাচন শুরু করলেন। এক পর্যায়ে বাহান্ন খন্ডে খন্ডিত পার্বতীর দেহ বাহান্ন স্থানে নিক্ষিপ্ত হয়ে বাহান্নটি তীর্থ কেন্দ্রের উদ্ভব হয়। তম্মধ্যে সীতাকুন্ডও একটি। সতী পার্বতীর উরুসন্ধীর অংশ এখানে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলে কথিত আছে। তবে হিন্দু ও তান্ত্রিক গ্রন্থগুলোতে সীতাকুন্ডের নাম সুস্পষ্ট নয়।এসব উপাখ্যান বৃটিশদের দলিল দস্তাবেজের মাধ্যমে জানা যায়।
আরও একটি তথ্য পাওয়া যায় এভাবে যে, পিতৃ আদেশে শ্রীরামচন্দ্র পত্নী সীতা দেবী ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষনকে নিয়ে বনবাসী হন এবং এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন । সে সুবাধে তাদের নামানুসারে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের পাদদেশে রামকুন্ড, লক্ষণকুন্ড,সীতাকুন্ড নামে তিনটি কুন্ড এবং একটি সীতার মন্দির ও বিদ্যামান ।
১৭৬১ সালের ৫ জানুয়ারী চট্টগ্রামের প্রথম ইরেজ চীফ নিযুক্ত হন হ্যারী(-) যাত্রা বিরতিকালে সীতাকুন্ড ক্যাম্প হতে পোর্ট উইলিয়ামের নিকট তিনি যে চিঠি লিখেন তাতে সীতাকোন নামে উল্লেখ দেখা যায়। মোটকথা সীতাকুন্ড বংগভারতের হিন্দুদের পূণ্যভুমি তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত । প্রতি বৎসর শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে ভারত ,বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য তীর্থ যাত্রীর সমাগম ঘটে সীতাকুন্ডে পূন্যতা লাভের জন্য ।
ভূতত্ত্ববিদদের মতানুসারে ফেনী নদী থেকে আরম্ভ করে চন্দ্রনাথ পাহাড় তথা সীতাকুন্ড পাহাড় শ্রেনীর পশ্চিমাঞ্চল, দক্ষিনে কর্ণফুলী পর্যন্ত এলাকাটি প্রাচীন কালে সমুদ্রের জলরাশির তলায় নিমজ্জিত ছিল । পরবর্তীতে ফেনী নদীর স্রোতধারা এবং সী্তাকুন্ড পার্বত্য অঞ্চলথেকে প্রবাহিত বিভিন্ন ছরা স্রোতধারার মাধ্যমে বাহিত পলি মাটি দ্বারা এই অঞ্চলগঠিত হয়েছে । প্রথমে দিকে এই এলাকাটি জঙ্গলাকীর্ণ ছিল, বাসপোয়োগী ছিল না । প্রকৃতির ক্রমবিবর্তনে এই অঞ্চলটিপাহাড়ী পশ্চিমদিকে সম্প্রসারিত হয়ে এবং কালক্রমে বাসপোযোগী হয়ে উঠে প্রথম দিকে অঞ্চলটিতেআদি অধিবাসীরাই বসবাস করত । সেই আদি অধিবাসিদের বংশধরেরা আজও সীতাকুন্ড পার্বত্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে । আর ও পরে ত্রিপুরা ,নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড পাহাড়ের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত অঞ্চল হতে আগত জনগোষ্ঠী জঙ্গলকেটে এই অঞ্চলকে বাসপোযোগী করে তোলে ।
স্থানীয় ভাবে যারা নোয়াখালী জেলার দাদরা থেকে এখানে এসে বসবাস করেছিল তারা দারাইল্যা হিসেবে পরিচিত, যারা সরাইল থেকে এদিকে এসে বসতি স্থাপন করেছিল তারা সরাইল্যা হিসেবে পরিচিত । যারা সন্ধীপ থেকে এদিকে এসে বসতি স্থাপন করেছিল তারা সন্ধীপী হিসেবে পরিচিত। উত্তর ও মধ্য চট্টগ্রাম থেকে যারা এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছিল তারা চট্টগ্রামী হিসেবে পরিচিত।মূলতঃবিভিন্ন শোনিত ধারার মিশ্রণে এতদাঞ্চলে একটি শংকর জনগোষ্ঠি গড়ে ওঠে ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস